ভালোবাসার গল্প – “রক্তে লেখা প্রতিশ্রুতি”
গ্রামের নাম সোনারদিঘী। ছোট্ট গ্রাম হলেও চারপাশে সবুজে ঘেরা, ভোরবেলা পাখির ডাক আর নদীর কলকল ধ্বনি মিলেমিশে এক অপার্থিব শান্তি তৈরি করে। কিন্তু সেই শান্তির ভেতরেই বাস করতো এক তীব্র আকুলতা—দেশকে ভালোবাসার, দেশের জন্য কিছু করার।
এই গ্রামে থাকতো রাফি আর লাবণ্য। দু’জন ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে। রাফি পড়াশোনায় মেধাবী, লাবণ্য গান আর কবিতায় মন জয় করেছিল সবার। তারা দু’জন শুধু পরস্পরের বন্ধু ছিল না—ছিল দেশের স্বপ্ন দেখার সাথী।
একদিন শহর থেকে খবর এল—দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে, অন্যায় ও দমনপীড়নে মানুষ দিশেহারা। রাফির বুক কেঁপে উঠলো। সে বললো,
— “লাবণ্য, আমি চুপচাপ বসে থাকতে পারবো না। দেশের জন্য কিছু করতে হবে।”
লাবণ্য চোখ ভিজিয়ে উত্তর দিল,
— “তুমি যদি যাও, আমিও থেমে থাকবো না। তোমার গানের শক্তি হবে আমার কবিতা, তোমার সংগ্রামের ভাষা হবে আমার কণ্ঠ।”
রাফি শহরে গেল, আন্দোলনে যোগ দিল। লাঠিচার্জ, গুলির শব্দ, স্লোগানের ঢেউ—সবকিছুর মাঝেও সে দাঁড়িয়ে থাকলো দৃঢ়ভাবে। লাবণ্য গ্রামে থেকে গেল, কিন্তু সে মানুষকে একত্রিত করলো, গান শোনালো, কবিতা পড়লো। গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, নারী—সবাই তার কণ্ঠে দেশের প্রতি ভালোবাসার আগুন অনুভব করলো।
একদিন খবর এলো—রাফি শহরের রাস্তায় পুলিশের গুলিতে আহত। লাবণ্য ছুটে গেল হাসপাতালে। রাফি অচেতন হলেও ঠোঁট নড়ছিলো—“দেশ… দেশ…”। লাবণ্য তার হাত ধরে বললো,
— “তুমি শুধু দেশের জন্য লড়াই করোনি, আমার হৃদয়ে আগুন জ্বেলে দিয়েছো। এই আগুন নিভবে না। যদি তুমি না পারো, আমি লড়বো।”
কিছুদিন পর রাফি সুস্থ হলো, আবার আন্দোলনে ফিরলো। আর লাবণ্য গ্রামের মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাইল,
“দেশ মানে শুধু মাটি না, দেশ মানে ভালোবাসা, দেশ মানে একে অপরের হাত ধরা।”
তাদের ভালোবাসা ছিল আলাদা—এটা শুধু দু’জনের জন্য ছিল না। সেটা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো গ্রামের মানুষের হৃদয়ে। মানুষ বুঝলো, দেশকে ভালোবাসা মানে কেবল স্লোগান নয়—এটা একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
শেষ পর্যন্ত আন্দোলন জয় পেল। দেশের মাটিতে নতুন ভোর হলো। রাফি আর লাবণ্য হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো সেই ভোরের আলোয়। তারা জানলো—তাদের ভালোবাসা কেবল নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তা রক্তে লেখা প্রতিশ্রুতি হয়ে পুরো জাতির হয়ে গেছে।