Flash Story
কুরআনের অবমাননা
কুরআনের অবমাননা- নর্থ সাউথের অপূর্ব পালকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন
বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট
বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট- জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্য বয়কট বিশ্বনেতাদের।
উত্তাল ভারতের লাদাখ
উত্তাল ভারতের লাদাখ: জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল কেন শীতল লাদাখ???
উইঘুর মুসলিম গণহত্যা
উইঘুর মুসলিম গণহত্যা: চীনের অন্ধকারতম রহস্য
গাজায় প্রকোশ্যে মৃত্যুদন্ড
গাজায় প্রকোশ্যে মৃত্যুদন্ড: গাজায় ইসরায়েলের তিন গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
রেড লাইন ঘোষণা
রেড লাইন ঘোষণা: ফ্রান্স ও সৌদি আরব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘রেড লাইন’ ঘোষণা
উত্তাল রাকসু নির্বাচন
উত্তাল রাকসু নির্বাচন- রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর, উত্তাল ক্যাম্পাস
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা- রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা
Gen-Z এর ইসলামপ্রীতি
Gen-Z এর ইসলামপ্রীতি: নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুসলিম হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি ও ধর্মীয় চেতনায় নতুন জাগরণ।
বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট
Share this article

বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট: ভূমিকা-

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে (UNGA) যখন কোনো নেতা বক্তব্য দিচ্ছেন, সেখানেই যদি নানা দেশের প্রতিনিধিরা হঠাৎ করে বেরিয়ে যান — সেটিই জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এমন কর্মসূচি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক কার্যকর প্রতিবাদমূলক কৌশল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) বক্তব্যের সময় অনেক বিশ্ব নেতারা মহলে থেকে বেরিয়ে গেছেন — এই ঘটনাকে ঘিরে মিডিয়া এবং কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এই ব্লগে আমরা বিশ্লেষণ করব কেন জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট ঘটল? , নেতানিয়াহুর বক্তৃতা কেন বর্জিত হলো, এবং এই ঘটনার অর্থ ও প্রভাব কি হতে পারে?

(গাজায় বোমা হামলা – অমানবীয় গণনির্যাতনের শেষ কোথায়?? গাজার মানবাধিকার সংকট।)

ওয়াকআউট: একটি প্রতিবাদমূলক কূটনৈতিক সংস্কার-

জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট” বলতে বোঝায় — কোনো দেশের প্রতিনিধি বা গোষ্ঠী সরাসরি কোনো বক্তৃতার সময় সভা স্থল ত্যাগ করা, প্রদর্শনমূলক ভাবে বোঝাতে যে তারা বক্তৃতার বিষয়বস্তু, বক্তার নীতি বা আচরণকে সমর্থন করে না। এটি সরাসরি বক্তব্যবিরোধী মনোভাব প্রকাশের একটি সর্বজনীন কূটনৈতিক অঙ্গভঙ্গি হতে পারে।

এই পন্থা সবসময় সাধারণ নয় — অনেক সময় দেশ বা প্রতিনিধি সম্ভাব্য দূষণ, মিডিয়া নজর, রাজনৈতিক চাপ ইত্যাদি কারণে বক্তব্য শোনেই থাকতে পারে এবং পরে বক্তব্যকে সমালোচনা করে। কিন্তু ওয়াকআউট করলে সাড়া বেশি, চিত্র বেশি ফুটে ওঠে সংবাদমাধ্যমে, এবং তা কার্যকর “দৃশ্য প্রতিবাদ” হিসেবে জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে। ইতিহাসে অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে — যেমন রাশিয়ার, ইরানের নেতাদের বক্তৃতার সময় প্রতিনিধিরা বেরিয়ে গেছেন মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধ কিংবা কূটনৈতিক অধিকার অস্বীকারের কারণে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য ও সার্বিক প্রেক্ষাপট-

২০২৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, নেতানিয়াহু জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনকে একটি বিতর্কিত বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি গাজায় অভিযান চালিয়ে যেতে “finish the job” (কাজ শেষ করতে হবে) — এমন ভাষা ব্যবহার করেন। জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিবিসি ও আল জাজিরা বলছে, এসময় অধিবেশনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কয়েক ডজন প্রতিনিধি প্রতিবাদস্বরূপ ওয়াকআউট করেন। এরপর নেতানিয়াহু প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, গাজায় হামাস দুর্বল হলেও তারা এখনো হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে এবং ৭ অক্টোবরের মতো আবারও হামলার অঙ্গীকার করছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের দৃঢ়তা, সেনাদের সাহসিকতা এবং আমাদের সাহসী সিদ্ধান্তের জন্যই ইসরায়েল তার অন্ধকারতম দিন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে— এটি ইতিহাসের অন্যতম সেরা সামরিক প্রত্যাবর্তন।’

নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, ‘তবে আমরা এখনো যুদ্ধ শেষ করিনি।’ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির কড়া সমালোচনা নেতানিয়াহু পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, যারা সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তারা ‘ভয়ানক ভুল’ করেছে। তার ভাষ্যে, ‘আপনারা ভালো কিছু করেননি, বরং একটি ভয়াবহ ভুল করেছেন। এই সিদ্ধান্ত আরও সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে উৎসাহিত করবে।’ তিনি দাবি করেন, এই স্বীকৃতি মূলত হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোকে পুরস্কৃত করছে।

মধ্যপ্রাচ্যকে নতুনভাবে গড়ে দিচ্ছে ইসরায়েল:

আঞ্চলিক হামলা ও গুপ্তহত্যার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছেন বলে জানান নেতানিয়াহু।

বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে পেজারের কথা? আমরা হিজবুল্লাহকে আক্রমণ করেছি এবং বিশ্বাস করুন, তারা আমাদের বার্তা পেয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনে ইসরায়েলের ভূমিকা আছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, হুতি নেতা এবং ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যার কৃতিত্বও ইসরায়েলের।

নেতাদের দ্বিপক্ষতা:

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো মিত্র দেশগুলোও ইসরায়েলের সমালোচনা করছে। অনেকেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে নেতানিয়াহুর ভাষ্য, ‘তারা জানে, ইসরায়েল আসলে তাদের যুদ্ধই লড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক নেতা যারা আমাদের প্রকাশ্যে নিন্দা করে, তারাই আবার গোপনে ধন্যবাদ জানায়— কারণ আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কারণে বহুবার তাদের রাজধানীতে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত হয়েছে।’

গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার:

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এ অভিযোগ সমর্থন পেয়েছে। তবে এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। বলেন, ‘একটা দেশ যদি সত্যি গণহত্যা চালাতে চাইত, তবে তারা কি আগে থেকেই বেসামরিকদের নিরাপদে সরে যেতে বলত?’

তবে বাস্তবতা হলো— গাজায় ৯০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত। সেখানকার হাসপাতাল, স্কুল ও শরণার্থী শিবির— এমন অনেক বেসামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার নজির রয়েছে।

যুদ্ধ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আশা:

ভাষণের শেষে নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই যুদ্ধই শেষপর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বয়ে আনবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজয় আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের (ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি) প্রসার ঘটাবে।’

নেতানিয়াহু ইসরায়েল-লেবানন ও ইসরায়েল-সিরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার কথাও বলেন, যদিও এই দুই দেশই ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট: বিশ্লেষণ ও কারণ-

বিবিসি ও আল জাজিরা বলছে, নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময়  অধিবেশনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কয়েক ডজন প্রতিনিধি প্রতিবাদস্বরূপ ওয়াকআউট করেন তবে এর মধ্যেই নেতানিয়াহু তার বক্তব্য চালিয়ে গেছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠতেই বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক প্রতিনিধিরা গণহারে ওয়াকআউট করেন।

নেতানিয়াহু মঞ্চে উঠতেই বহু প্রতিনিধি দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে যান। গত বছরের মতো এবারও একই ধরনের প্রতিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটল। এই ওয়াকআউটের ফলে একসঙ্গে অনেকেই বেরিয়ে যাওয়ায় বেরোনোর পথে লম্বা লাইন তৈরি হয়। তবে এর মধ্যেই মার্কিন প্রতিনিধিদল নেতানিয়াহুকে করতালি দেয়। নেতানিয়াহু সেই সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। হলে উপস্থিত ব্রাজিলীয় প্রতিনিধিদলকে ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ পরে থাকতে দেখা যায়। সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের প্রথম দিনে নেতানিয়াহু তার ভাষণ শুরু করার আগে সকল প্রতিনিধিদের শান্ত থাকতে বলা হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মিশন বিভিন্ন বিশ্বনেতাকে চিঠি পাঠিয়ে নেতানিয়াহুর ভাষণ বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল এবং তাকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।

 আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব-

এই ওয়াকআউট ইসরায়েলের কৃতকর্ম ও নীতিকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে এনে দিয়েছে। আলোচনায় এসেছে মানবাধিকার, যুদ্ধবিধ্বংসতা ও শান্তি পরিকল্পনার গুরুত্ব। যেসব দেশ সান্নিধ্য নিয়েছে বা বয়কট করেছে, তাদের ভবিষ্যৎ অবস্থান রীতি ও কূটনৈতিক প্রভাব বাড়তে পারে।

উপসংহার-

জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিবাদ এবং দৃশ্য প্রতিবাদ কৌশল হিসেবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নেতানিয়াহুর বক্তব্য বয়কট করে বিশ্বনেতারা একত্রে একটি সংকেত দিয়েছেন: নিরপেক্ষ রাখা যাচ্ছে না, এবং যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও একতরফা সিদ্ধান্তকে তারা চুপচাপ মেনে নিতে রাজি নয়।

তবে, বয়কট সর্বদা সর্বোত্তম পথ নয় — কখনো আওয়াজ হলেও আলোচনায় উপস্থিত হওয়াই বেশি কার্যকর হতে পারে। এই ঘটনা ভবিষ্যতের শান্তি প্রক্রিয়া, রাজনীতি ও মানবাধিকার সংলাপে একটি নতুন মোড় দিতে পারে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-

প্রশ্ন ১: “জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট” কি নতুন কিছু?
উত্তর: না, এটি নতুন নয়। ইতিহাসে বহুবার আন্তর্জাতিক বক্তৃতার সময় প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ হিসেবে বেরিয়ে গেছেন। যেমন রাশিয়া, ইরান, ইসরায়েল— নানা সময়ে।

প্রশ্ন ২: ওয়াকআউট করলে কি বক্তৃতাটি শোনা যায়?
উত্তর: না; মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বক্তব্য শুনে থাকা না, প্রতিবাদ দেখানো। তবে বক্তৃতাটির রেকর্ড, পাঠ করা বা সংবাদমাধ্যমে প্রচার হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: কি কারণে প্রতিনিধিরা বেরিয়ে গেছে?
উত্তর: নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ, কূটনৈতিক সংকেত দেওয়া, জনমত চাপে প্রতিরোধ, ইতিমধ্যে চলমান যুদ্ধবিধ্বংস ও মানবাধিকার লঙ্ঘন — এসব মিলিত কারণ থাকতে পারে।

প্রশ্ন ৪: এই বয়কট ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করবে কি?
উত্তর: সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক দেশ বলবে, “শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া উচিত,” এবং বয়কট মানে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে, সঠিক কূটনৈতিক পন্থা এবং সংলাপ চেতনা থাকলে ক্ষতিকর প্রভাব সীমিত রাখা যেতে পারে।

প্রশ্ন ৫: এতে কি ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক একাকিত্ব বাড়ল?
উত্তর: হ্যাঁ, এমন প্রতিক্রিয়া এসেছে — ৭৭টি দেশ তাদের সিট খালি রেখেছে বা বক্তব্য শোনার আগেই চলে গিয়েছে — এটি ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক চিত্রকে আরও কঠিন করে তুলেছে।


Share this article

Leave a Reply

Back To Top