জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ: ভর্তি, কোর্স, সুযোগ-সুবিধা ও ভবিষ্যৎ গন্তব্য

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ: ভর্তি, কোর্স, সুযোগ-সুবিধা ও ভবিষ্যৎ গন্তব্য-

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও মানসম্মত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরে অবস্থিত। গ্রামীণ পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটির চারপাশে রয়েছে সবুজ বনানী ও শান্ত আবহ, যা পড়াশোনার জন্য অত্যন্ত অনুকূল। ১৯৯২ সালে আলহাজ্ব জহিরুল ইসলাম এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন, যার স্বপ্ন ছিল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া।

কলেজের অবস্থান ও অবকাঠামো-

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অবস্থিত বাজিতপুরে, যা ঢাকা থেকে রেলপথে সহজেই যাওয়া যায়। কলেজটির নিজস্ব চত্বরের মধ্যে রয়েছে একাডেমিক বিল্ডিং, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন ও লাইব্রেরি। আধুনিক অবকাঠামো ও প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দারুণ লার্নিং এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে।

এমবিবিএস প্রোগ্রাম ও একাডেমিক কাঠামো-

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্স পরিচালিত হয়, যার শেষে এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করতে হয়। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (BMDC) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

প্রধান বিষয়সমূহ:

  • এনাটমি
  • ফিজিওলজি
  • বায়োকেমিস্ট্রি
  • প্যাথলজি
  • ফার্মাকোলজি
  • মাইক্রোবায়োলজি
  • কমিউনিটি মেডিসিন
  • মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী ও শিশু রোগ

ভর্তি প্রক্রিয়া-

সরকার নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া যায়। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধাক্রম ও সরকারি নীতিমালা অনুসারে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:

  • এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ
  • নির্দিষ্ট জিপিএ
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

হাসপাতাল সুবিধা-

কলেজের সঙ্গে রয়েছে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল। এই হাসপাতালেই শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ লাভ করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পেশায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ যেমন কার্ডিওলজি, গাইনী, শিশু রোগ, সার্জারি, মেডিসিন বিভাগগুলোতে সরাসরি রোগীদের সেবা দিয়ে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাওয়া যায়।

হোস্টেল ব্যবস্থা-

কলেজে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা হোস্টেল রয়েছে। প্রতিটি হোস্টেলেই রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন।

শিক্ষকদের মান ও পাঠদান-

এখানে কর্মরত শিক্ষকরা সবাই পেশাদার ও অভিজ্ঞ। তাঁদের পাঠদানের ধরন আন্তর্জাতিক মানের এবং শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর ওপর জোর দেয়। প্রতি বিভাগে রয়েছে আলাদা ল্যাব, মডেল ও প্র্যাকটিক্যাল সুবিধা।

ছাত্রজীবন ও ক্যাম্পাস লাইফ-

শুধু পড়ালেখা নয়, কলেজের ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে:

  • মেডিকেল ক্যাম্প
  • বিতর্ক প্রতিযোগিতা
  • বার্ষিক ক্রীড়া উৎসব
  • ব্লাড ডোনেশন প্রোগ্রাম

বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ফোকাস দেয়।

ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা-

এখান থেকে পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরেও আবেদন করতে পারে। অনেকেই গবেষণা, স্বাস্থ্য প্রশাসন কিংবা এনজিওতে চিকিৎসা কার্যক্রমেও যুক্ত হন।

কলেজটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য-

  • ঢাকার বাইরে হলেও উন্নত অবকাঠামো
  • হাসপাতাল ও কলেজ এক ক্যাম্পাসে
  • আন্তর্জাতিক মানের পাঠদান পদ্ধতি
  • চিকিৎসা ও সেবার সংমিশ্রণ
  • অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের উপস্থিতি
  • উন্নত লাইব্রেরি ও গবেষণার সুযোগ

উপসংহার-

জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি মিশন — যার উদ্দেশ্য হলো দক্ষ, মানবিক ও বিশ্বমানের চিকিৎসক তৈরি করা। যারা ভবিষ্যতে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নেতৃত্ব দিতে পারবে। আপনি যদি চিকিৎসা পড়াশোনায় আগ্রহী হন এবং একটি মানসম্মত পরিবেশে পড়াশোনা করতে চান, তাহলে জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হতে পারে আপনার সঠিক গন্তব্য।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-

১. জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ কোথায় অবস্থিত?

এটি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরে অবস্থিত।

২. কলেজের প্রধান কোর্স কী?

এমবিবিএস (MBBS) – ৫ বছর + ১ বছর ইন্টার্নশিপ

৩. ভর্তি কিভাবে হয়?

 স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে।

৪. টিউশন ফি কেমন?

 তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের চেয়ে সাশ্রয়ী।

৫. বিদেশি শিক্ষার্থীরা কি ভর্তি হতে পারে?

হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্যও সুযোগ রয়েছে।

৬. ইন্টার্নশিপ কোথায় করতে হয়?

কলেজের নিজস্ব হাসপাতালে ১ বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top