Flash Story
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: ক্যামিকেল গোডাউন ও পোশাক কারখানায় আগুন। বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস, বাসিন্দাদের মাস্ক পরার পরামর্শ
রাকসু নির্বাচন ২০২৫
রাকসু নির্বাচন ২০২৫- রাকসু নির্বাচনের ২৩ পদের ২০টিতেই শিবিরের জয়
চাকসু নির্বাচন
চাকসু নির্বাচন- ডাকসুর পর চাকসুতেও ছাত্রশিবিরের জয়যাত্রা।
নির্বাসিত হচ্ছে বন্দী ফিলিস্তিনিরা
নির্বাসিত হচ্ছে বন্দী ফিলিস্তিনিরা- ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত ১৫৪ ফিলিস্তিকে পাঠানো হচ্ছে নির্বাসনে।
আফগানিস্তানের ভারত সফর
আফগানিস্তানের ভারত সফর: সম্পর্ক, কূটনীতি ও ভবিষ্যতের নতুন অধ্যায়
কুরআনের অবমাননা
কুরআনের অবমাননা- নর্থ সাউথের অপূর্ব পালকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন
বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট
বিশ্বনেতাদের ওয়াকআউট- জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্য বয়কট বিশ্বনেতাদের।
উত্তাল ভারতের লাদাখ
উত্তাল ভারতের লাদাখ: জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল কেন শীতল লাদাখ???
উইঘুর মুসলিম গণহত্যা
উইঘুর মুসলিম গণহত্যা: চীনের অন্ধকারতম রহস্য
hadis-park-khulna
Share this article

শহীদ হাদিস পার্ক

শহীদ হাদিস পার্কের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-

শহীদ হাদিস পার্ক খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক এবং জনপ্রিয় উদ্যান। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব রাজনৈতিক আন্দোলনের একজন শহীদ ছাত্র হাদিসুর রহমান-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। একদিকে যেমন এটি একটি সবুজ বিনোদন কেন্দ্র, অন্যদিকে এটি একটি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ।

প্রতিদিন শত শত স্থানীয় এবং পর্যটক এই পার্ক পরিদর্শন করেন—কেউ বিশ্রামের জন্য, কেউ ইতিহাস জানার জন্য। এর সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং সাংস্কৃতিক ভূমিকার কারণে পার্কটি খুলনার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

শহীদ হাদিস পার্কের ইতিহাস-

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় হাদিসুর রহমান নামে খুলনার এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যু সে সময়কার ছাত্র-জনতার মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতার আন্দোলনে নতুন গতি আনে।

তার স্মরণে তৎকালীন “খুলনা টাউন পার্ক”-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদ হাদিস পার্ক। আজও এই পার্কটি স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস বহন করে এবং তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিত।

অবস্থান ও যাতায়াত-

শহীদ হাদিস পার্কের অবস্থান অত্যন্ত সুবিধাজনক। এটি ডাকবাংলো মোড়, খুলনার কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত, যা শহরের যেকোনো স্থান থেকে সহজেই যাতায়াতযোগ্য।

  • জেলা: খুলনা
  • ঠিকানা: ডাকবাংলো মোড়, খুলনা শহর
  • অবস্থান: ২২.৮১৯০° N, ৮৯.৫৫০০° E

রিকশা, অটো-রিকশা বা ব্যক্তিগত যানবাহনে সহজেই পার্কে পৌঁছানো যায়। পার্কটি খুলনার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও ব্যবসায়িক এলাকা সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

শহীদ হাদিস পার্কের দর্শনীয় স্থানসমূহ-

শহীদ হাদিস পার্ক কেবল একটি সাধারণ উদ্যান নয়; এর রয়েছে একাধিক উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ:

  • শহীদ হাদিস স্মৃতিস্তম্ভ: পার্কের কেন্দ্রীয় ভাস্কর্য, যা শহীদের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
  • সবুজ মাঠ ও হাঁটার পথ: প্রশস্ত সবুজ এলাকা ও ছায়াঘেরা পথ ঘুরে বেড়ানোর জন্য আদর্শ।
  • শিশুদের খেলার স্থান: দোলনা, স্লাইডসহ শিশুদের জন্য উপযুক্ত নিরাপদ এলাকা।
  • মুক্তমঞ্চ: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস ও জনসমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বসার ব্যবস্থা: পার্ক জুড়ে ছড়িয়ে আছে বেঞ্চ, যেখানে বিশ্রাম, আলাপ বা পড়াশোনা করা যায়।

জাতীয় দিবসে শহীদ হাদিস পার্কের গুরুত্ব-

২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ এবং ১৬ই ডিসেম্বর পার্কটি হয়ে ওঠে একটি প্রাণবন্ত মিলনমেলা। এসব দিনে স্থানীয় স্কুল-কলেজ, রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পার্কে এসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান এবং অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।

এই পার্কটি খুলনার সাংস্কৃতিক চেতনার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে জাতীয় দিবসগুলোতে।

স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনে ভূমিকা-

শহীদ হাদিস পার্ক খুলনার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষভাবে যুক্ত। এখানে প্রতিদিন দেখা যায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ:

  • বয়স্ক নাগরিকরা সকালে হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম ও পত্রিকা পড়তে আসেন।
  • তরুণ শিক্ষার্থীরা আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি বা ঘুরতে আসে।
  • শিল্পী ও কবিরা ছবি আঁকা, গান-বাজনা কিংবা কবিতা লিখতে পার্কে বসেন।
  • স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পার্ককেন্দ্রিক জনসমাগম থেকে উপকৃত হন।

এটি কখনো হয় প্রেমিক-প্রেমিকাদের গোপন আড্ডা, কখনো রাজনৈতিক মিটিংয়ের স্থান, আবার কখনো সাধারণ মানুষের একমাত্র নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা।

পার্কের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ-

খুলনা সিটি কর্পোরেশন পার্কের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে:

  • হাঁটার রাস্তা সংস্কার
  • আধুনিক লাইটিং ও সৌন্দর্যবর্ধন
  • টয়লেট ও স্যানিটেশন সুবিধা উন্নয়ন
  • সবুজ এলাকা ও ফুলের বাগান রক্ষণাবেক্ষণ
  • মূল স্মৃতিস্তম্ভ পুনরুদ্ধার
  • সিসিটিভি স্থাপন

এসব কার্যক্রম পার্কটিকে আরও পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

শহীদ হাদিস পার্কে যাওয়ার সেরা সময়-

শহীদ হাদিস পার্কে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন মাসগুলো। তখন আবহাওয়া সুন্দর ও আরামদায়ক থাকে।

দর্শনের আদর্শ সময়:

  • সকাল (৬টা – ৯টা): শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটাচলা বা ধ্যানের জন্য উপযুক্ত
  • বিকেল (৪টা – ৭টা): পরিবার, বন্ধু ও শিশুদের জন্য উপযোগী সময়

জাতীয় দিবসগুলোতে যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর পার্কে এলেই দেশপ্রেম ও সংস্কৃতির অনন্য মিশ্রণ অনুভব করা যায়।

উপসংহার-

সবকিছু বিবেচনায়, শহীদ হাদিস পার্ক কেবল একটি পার্ক নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং দেশের আত্মত্যাগের জীবন্ত স্মারক। একদিকে এটি মানুষের বিশ্রামের স্থান, অন্যদিকে এটি তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে।

যারা বাংলাদেশের ইতিহাস জানার আগ্রহ রাখেন, তাদের জন্য খুলনার শহীদ হাদিস পার্ক অবশ্যই একবার ভ্রমণযোগ্য। এখানে এসে আপনি শান্তি, অনুপ্রেরণা ও দেশের প্রতি গর্ব একসাথে অনুভব করবেন।

শহীদ হাদিস পার্ক সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী-

শহীদ হাদিস পার্ক কী কারণে বিখ্যাত?
এই পার্কটি ১৯৬৯ সালের শহীদ ছাত্র হাদিসুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সবুজ পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত।

হাদিসুর রহমান কে ছিলেন?
তিনি ছিলেন খুলনার এক ছাত্র নেতা যিনি পাকিস্তানি দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ হন।

শহীদ হাদিস পার্ক কোথায় অবস্থিত?
পার্কটি খুলনার ডাকবাংলো মোড় এলাকায় অবস্থিত, যা শহরের কেন্দ্রস্থলে পড়ে।

পার্কে প্রবেশের জন্য কোনো টিকেট লাগে কি?
না, শহীদ হাদিস পার্কে প্রবেশ একেবারে বিনামূল্যে।

পার্কটি কি শিশুদের জন্য নিরাপদ?
হ্যাঁ, এখানে শিশুদের জন্য আলাদা খেলার জায়গা রয়েছে এবং এটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে।

বিদেশি পর্যটকরা কি এই পার্কে যেতে পারেন?
অবশ্যই। দেশি-বিদেশি সকল পর্যটক এই ঐতিহাসিক পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন।

জাতীয় দিবসগুলোতে কি এখানে বিশেষ কিছু হয়?
হ্যাঁ, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর পার্কে নানা অনুষ্ঠান, মাল্যদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

দর্শনের সেরা সময় কখন?
সকাল ও বিকেল সেরা সময়, বিশেষ করে শীতকালে পার্কের পরিবেশ সবচেয়ে মনোরম হয়।


Share this article

Leave a Reply

Back To Top