rastro shongskar vs nirbachon
Share this article

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন?

বাংলাদেশ বর্তমানে এক জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি—সব মিলিয়ে মূল প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে: রাষ্ট্র সংস্কার আগে হবে, নাকি নির্বাচন আগে হবে?
জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের ভোটাধিকার। নির্বাচন ছাড়া জনমত যাচাইয়ের আর কোনো বৈধ উপায় নেই।

আন্তর্জাতিক চাপ ও স্বীকৃতি: আন্তর্জাতিক মহল নিয়মিত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। এতে দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা টিকে থাকে।

রাজনৈতিক বৈধতা: নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল বা জোট জনসমর্থনের ম্যান্ডেট পায়, যা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক বৈধতা দেয়।

রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নির্বাচনের সমস্যা

বর্তমানে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থার ঘাটতি রয়েছে।

প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।

অতীতে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে পুনরায় সহিংসতা, বর্জন ও বিতর্ক তৈরি হয়।

রাষ্ট্র সংস্কার আগে করার যুক্তি

বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠন: একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় সংস্কার: ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রতিষ্ঠান: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা না গেলে যেকোনো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

সামাজিক স্থিতিশীলতা: সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরলে নির্বাচনকে সবাই গ্রহণযোগ্য মনে করবে।

সংস্কার আগে হলে ঝুঁকি:

দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলতে পারে।

কে সংস্কার বাস্তবায়ন করবে, সে নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।

জনগণ তাৎক্ষণিক ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, শুধু নির্বাচন আগে হলে তা জনগণের আস্থা অর্জন করবে না, আবার শুধু সংস্কার আগে হলে তা রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন কঠিন। সেক্ষেত্রে একটি ধাপে ধাপে সমাধান জরুরি।

সম্ভাব্য সমাধান
* অস্থায়ী জাতীয় ঐক্যমতের সরকার বা নিরপেক্ষ প্রশাসন গঠন করে সীমিত সময়ের জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো বাস্তবায়ন।

* নির্বাচন কমিশন, ভোটার তালিকা ও ভোটপ্রক্রিয়া সংস্কার।

* দলগুলোকে আলোচনায় বসিয়ে সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করা।

এরপর অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি নির্বাচন করা হলে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না—এই আশঙ্কা প্রবল। আবার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিলম্বিত করলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও জনঅসন্তোষ বাড়বে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনকে পরস্পরবিরোধী না ভেবে সমন্বিতভাবে এগোনোই সর্বোত্তম পথ। অর্থাৎ, সীমিত আকারে জরুরি সংস্কার আগে, আর পরবর্তীতে সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন—এই দুই ধাপেই গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব।


Share this article

Leave a Reply

Back To Top