পেপ্যাল ও স্ট্রাইপ ছাড়া বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি থমকে আছে: জরুরি সমাধান এখনই প্রয়োজন
ফ্রিল্যান্সার থেকে স্টার্টআপ—একই সমস্যার শিকার
মাত্র ২২ বছর বয়সে সুমন আলী আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের জন্য সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। এখন ২৮ বছরে তিনি বিদেশি একটি স্টার্টআপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু প্রতি বেতনের সঙ্গে তাকে লড়তে হয় এক বড় সমস্যার সঙ্গে—বাংলাদেশে নেই PayPal বা Stripe। ফলে পেমেন্ট নিতে হয় ঘুরপথে, সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হয়। তার ভাষায়, “বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই—অভাব কেবল সুযোগের।”
বাংলাদেশের তরুণদের অদম্য সম্ভাবনা
ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার ও প্রযুক্তি-দক্ষ তরুণদের কারণে বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী ভারত ২০১৭ সালেই পেপ্যাল চালু করলেও, বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষায়। ফলে প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা উদ্যম হারাচ্ছেন। অথচ গত এক দশকে বাংলাদেশ স্টার্টআপ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ একসময় বিদেশে কর্মী পাঠিয়ে রেমিট্যান্স আয় করেছিল, এখন ঘরে বসে ডিজিটাল উদ্যোক্তারা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথে। কিন্তু PayPal ও Stripe-এর অভাব এই প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করছে।
পেপ্যাল চালুর সম্ভাবনা ও সাম্প্রতিক উদ্যোগ
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রমের সঙ্গে পেপ্যাল সংযুক্তির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এপ্রিল মাসে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস এবং স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে আসে। যদিও এই উদ্যোগ কেবল স্টারলিংক লেনদেনে সীমাবদ্ধ, তবুও পূর্ণাঙ্গভাবে পেপ্যাল চালু করা এখন জরুরি।
ফ্রিল্যান্সারদের দৈনন্দিন ভোগান্তি
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন কর্মশক্তি সরবরাহকারী দেশ। Fiverr ও Upwork-এর মতো প্ল্যাটফর্মে হাজারো তরুণ কাজ করলেও পেপ্যাল না থাকায় তাদের আয়ের টাকা তুলতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল পদ্ধতিতে—তৃতীয় পক্ষের এজেন্ট, বিদেশে থাকা আত্মীয় বা বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে। এতে সময়, অর্থ, এমনকি নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পেপ্যাল চালুর উপকারিতা
-
সহজ আন্তর্জাতিক লেনদেন: সরাসরি বৈশ্বিক ক্লায়েন্টের সঙ্গে লেনদেনের সুযোগ।
-
ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম ইন্টিগ্রেশন: Fiverr ও Upwork-এর পেমেন্ট আরও সহজ হবে।
-
দ্রুত ফান্ড ট্রান্সফার: আয়ের টাকা পাওয়ার সময় কমে যাবে।
-
নিরাপত্তা ও আস্থা বৃদ্ধি: ক্রেতা-বিক্রেতা সুরক্ষা নীতি আন্তর্জাতিক মানের।
-
সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি: স্থানীয়ভাবে পেপ্যাল চালু হলে বাংলাদেশ সরকারও ফি ও কর সংগ্রহ করতে পারবে।
স্ট্রাইপ: স্টার্টআপদের জন্য অপরিহার্য
পেপ্যাল যেমন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, Stripe তেমনি স্টার্টআপ ও SaaS কোম্পানির জন্য অপরিহার্য। Stripe এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট ও অ্যাপে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সংযোজন সম্ভব—যেমন স্থানীয়ভাবে SSLCommerz করে থাকে, তবে Stripe-এর মাধ্যমে তা হবে বৈশ্বিক মানে।
সুমন আলীর ভাষায়, “Stripe থাকলে আমি বাংলাদেশেই স্টার্টআপ চালু করতাম। পেপ্যালের বিকল্প আছে, কিন্তু Stripe-এর নেই।”
কেন এখনই পদক্ষেপ জরুরি
বর্তমানে টুভালু, ফিজির মতো ছোট দেশগুলোও পেপ্যাল ব্যবহার করছে, অথচ বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত। এর ফলে আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশি সরকারকে কর দিচ্ছে, যা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষতির কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিটি বিভাগকে দ্রুত পেপ্যাল ও স্ট্রাইপ চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। স্বচ্ছ নীতি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে কাজ করলে এই বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
উপসংহার
বাংলাদেশের তরুণরা বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে ছাড়া এই অগ্রযাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। পেপ্যাল ও স্ট্রাইপ চালু হলে শুধু ফ্রিল্যান্সার ও স্টার্টআপ নয়, দেশের অর্থনীতিতেও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এখনই সঠিক পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ ঘরে বসেই বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাবে, আর তরুণদের প্রতিভা তখন পূর্ণমাত্রায় বিশ্বে আলো ছড়াবে।