ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা: ভূমিকা-
ফিলিস্তিন প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ইস্যু। বহু দশক ধরে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে আসছে ফিলিস্তিনি জনগণ। সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম হলো যখন যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেই নয়, বরং মানবিকতা ও বৈশ্বিক কূটনীতিতেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
( গাজায় বোমা হামলা – অমানবীয় গণনির্যাতনের শেষ কোথায়?? গাজার মানবাধিকার সংকট।)
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণার পটভূমি-
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের গতি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
বেলফোর ঘোষণার ১০৮ বছরর পর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ১৯১৭ সালে “প্যালেস্টাইনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার” সমর্থন জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য। একইসঙ্গে এটি ঘটল ব্রিটিশ ম্যান্ডেটভুক্ত প্যালেস্টাইনে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ৭৭ বছর পর।
যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রবিবার এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতার মুখে আমরা শান্তি ও দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
গতকাল রবিবার যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে এই তিন দেশ। তবে এই এই স্বীকৃতি হামাসের জন্য কোনো পুরস্কার নয় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া দেড় শতাধিক দেশের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য উন্নত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমি জানি, এই সংঘাত কতটা ব্যাপক। এটি বিভাজন তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন- ‘কেউ কেউ এটিকে ঘৃণা ও ভয় জাগানোর জন্য ব্যবহার করেছে। আমাদের শুধু ঘৃণাকে প্রত্যাখ্যান করলে হবে না, সব ধরনের ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।’
গতকাল কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বর্তমানে ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে রোধ করার জন্য পদ্ধতিগতভাবে কাজ করছে। গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে
দশ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান ইসরায়েল সরকারের স্পষ্ট নীতি, কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কানাডা। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কানাডা সরকার এটি করেছে।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সরকার বলেছে, দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়। এদিকে যুক্তরাজ্যের নেওয়া এই পদক্ষেপ ইসরায়েল সরকার, জিম্মিদের পরিবার এবং কিছু রক্ষণশীলদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত’ করে।
এদিকে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাওয়া যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ রিপাবলিকান আইন প্রণেতা। তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ নিউইয়র্কের এলিস স্টেফ্যানিক ও টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ রয়েছেন।
কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ?-
ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা – বিশ্বে প্রথম সারির দেশগুলো স্বীকৃতি দেওয়ায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন আরও শক্তিশালী হলো।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে – ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় বাধ্য করবে।
বৈশ্বিক কূটনীতিতে পরিবর্তন – পশ্চিমা ব্লকের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ একইসঙ্গে এমন স্বীকৃতি দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলো।
মানবাধিকারের স্বীকৃতি – দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে থাকা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যায়বিচারের প্রতীক।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া-
এই স্বীকৃতির পর মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েল: তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বলেছে এটি শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।
যুক্তরাষ্ট্র: সমালোচনা ও হুমকি দিয়েছেন। তবে এখনো নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে, আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া অপেক্ষমাণ।
আরব বিশ্ব: সৌদি আরব, কাতার, তুরস্কসহ অনেক দেশ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসংঘ: মহাসচিব জানিয়েছেন, এটি শান্তি আলোচনায় নতুন গতিশীলতা যোগ করবে।
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতিক্রিয়া-
ফিলিস্তিনের জনগণ আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। রাস্তায় মিছিল, পতাকা উত্তোলন, এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারা এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, “আজ আমাদের সংগ্রামের ফলাফল মিললো। আমরা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলাম।”
উপসংহার-
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা যে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে, তা ইতিহাসের এক মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত। এটি শুধু ফিলিস্তিন নয়, বরং বিশ্ব শান্তি, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের এক নতুন অধ্যায়। ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া কতটা বদলে দিতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
প্রশ্নত্তোর-
প্রশ্ন ১: ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এটি ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা করে।
প্রশ্ন ২: কোন দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে?
উত্তর: সার্বিব বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রশ্ন ৩: ইসরায়েল এ স্বীকৃতির প্রতি কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
উত্তর: ইসরায়েল তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং বলেছে এটি শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে।
প্রশ্ন ৪: ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণায় জাতিসংঘের ভূমিকা কী?
উত্তর: জাতিসংঘ ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ দিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি আলোচনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।