Flash Story
নেপালের অন্তবর্তীকালীন সরকার- কে হলেন নেপালের অন্তবর্তীকালীন সরকার?
নেপাল সরকারের পতন: নেপাল কী শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পথেই হেঁটেছে??
ছাত্রশিবিরের ডাকসু: কেন আলোচনায় ও জনপ্রিয়তায় এল? এর জনপ্রিয়তার পেছনের ইতিহাস ও প্রভাব
জাকসু ফলাফলে বিলম্ব: জাকসু নির্বাচনের ফলাফলে কেন এত দেরি?
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি: ইতিহাস, মানবিক সংকট এবং সমাধানের পথ
জাকসু নির্বাচন ২০২৫: ইতিহাস, প্রস্তুতি ও গুরুত্ব
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ছয় বছর পর ভোট গ্রহণে শিক্ষার্থীদের উৎসবমুখর অংশগ্রহণ
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
কসমেটিক্স ও ‍স্কিন কেয়ার পণ্যের আদ্যোপান্ত: ব্যবহার, নিরাপদ পছন্দ ও সতর্কতা
Share this article

জাকসু ফলাফলে বিলম্ব: ভূমিকা-

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতি ও নেতৃত্বের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর যখন জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু নির্বাচন শেষে জাকসু ফলাফলে বিলম্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা, বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা – সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়ে।

এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব জাকসু ফলাফলে বিলম্বের কারণ, এর প্রভাব, ফলাফল ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে।

জাকসু ফলাফলে বিলম্ব হওয়ার কারণ-

বৃহস্পতিবার ভোট দেওয়া শেষ হলেও ভোটের ফলাফল হাতে পায়নি  জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের   শিক্ষার্থীরা। ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম দেখে বিভিন্ন দলে ভোট বর্জন হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দেখা যায়। ভোট শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ঘোষণা করা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা জাকসু নির্বাচনের ফলাফল। ভোট গণনায় এত সময় লাগায় বিভিন্ন দলসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ, সংশয় ও ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের শঙ্কা ছিল।  ভোটের ফলাফলের থেকে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের বিলম্ব হওয়ার আলোচনা বেশি।

এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার৭৪৩ জন(প্রায়)। জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫ টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১ টি হলে সহ-সভাপতি বা ভিপি পদে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক জিএস পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারী পদে ৬ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পুরুষ পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ৮ হাজার ১৬টি অর্থাৎ ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।

তাই প্রশ্ন উঠেছে এই কম সংখ্যক ভোট গণনায় কেনো এতোটা সময় লাগলো?

অনিয়ম-অভিযোগ-বর্জনের মধ্য দিয়ে জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। অধিকাংশ প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকসু নির্বাচনে নানা অব্যবস্থাপনা ও ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন। ব্যালট পেপার নিয়েও অভিযোগ ওঠে। ছাত্রদলের অভিযোগ- জামায়াতের প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট ছাপানো হয়েছে। পাল্টা অভিযোগ তুলে শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থীর দাবি করেন, জামায়াত নয়, বরং বিএনপি সমর্থকের প্রতিষ্ঠানে ব্যালট ছাপানো হয়েছে। ছাত্র শিবিরের দল এবং তাদের সমর্থন করা শিক্ষার্থীরা বলছে যে ছাত্রদল ও বিএনপি ছাত্রশিবিরের জয় নিশ্চিত জানত বিধায় ভোট কারচুপির মাধ্যমে ফল প্রকাশে বিলম্ব হ্ওয়ার নাটক সাজিয়েছে।

‘পুরো প্রক্রিয়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে কারচুপির জন্য সাজানো হয়েছে‘—অভিযোগ তুলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত তিন শিক্ষক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার মৃত্যু নিয়েও তাদের একজন। শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি জানান-“ নির্বাচন চলাকালে আসা অভিযোগগুলোর সুরাহা না করেই ভোট গণনা চালিয়ে যাওয়ায় তিনি নির্বাচন কমিশনের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।”

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও ফলাফল না পাওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রার্থীরা।

জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর পদ্ধতিতে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনায় সময় বেশি লেগেছে। “জাকসু নির্বাচনকে নিরপেক্ষ রাখতে সব পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছি আমরা”-বলেন তিনি।

এছাড়া অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে নির্বাচনে অংশ নেয়া কয়েকটি প্যানেলের ভোট বর্জন এবং কয়েকজন শিক্ষকের ভোটের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা রয়েছে।

যদিও ফল ঘোষণার আগে জাকসুর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “কিছু বিচ্যুতি থাকতে পারে কিন্তু ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি।”

গণনা পর্যায়ে ভোটের দায়েত্বে থাকা একজন শিক্ষকের মৃত্যু এবং অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে কয়েকজন শিক্ষকের কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘটনাও ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করে জাকসু নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া একাধিক গণমাধ্যমকর্মী। তারা বলছেন, অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের এক পক্ষের ভোট বর্জন, অন্য পক্ষের ফল প্রকাশের দাবি, ভোটের দায়িত্ব থেকে কয়েকজন শিক্ষকের সরে দাড়ানো কিংবা এক শিক্ষকের মৃত্যু সব মিলিয়ে এবারের জাকসু নির্বাচনকে ঘটনাবহুলই বলা চলে। 

জাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ-

অবশেষে শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এসময় নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশেদুল আলম জানান, নির্বাচনের ফলাফল ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে চাইলেও দুটি সংগঠন থেকে লিখিতভাবে এই ফলাফল ম্যানুয়ালি করার আবেদন জানানো হয়েছিল।
এছাড়া নির্বাচন নিয়ে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন মাধ্যমে নানা কথা বলা হলেও ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি, কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।”
এরপর শুরু হয় ফলাফল ঘোষণায় শুরুতেই ২১টি হল সংসদের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তারপর ঘোষণা করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৫টি পদে নির্বাচিতদের নাম।
জাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি বা ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট।
আর সাধারণ সম্পাদক বা জিএস পদে ৩ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম।
এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ফেরদৌস আল হাসান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণা শুরু করে।
প্রথমে হল সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হচ্ছে, এরপর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে।

প্রশ্নোত্তর-

প্রশ্ন: জাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব কী?
জাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করে, নেতৃত্ব গড়ে তোলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

প্রশ্ন: জাকসু ফলাফলে বিলম্ব কেন?
ফলাফল বিলম্বের প্রধান কারণ হলো প্রশাসনিক দুর্বলতা, কারিগরি জটিলতা, রাজনৈতিক চাপ ও অনিয়মের।

প্রশ্ন: বিলম্বিত ফলাফল প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশে কী প্রভাব ফেলেছে?
শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা, বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা – সবকিছুতেই এর প্রভাব ফেলছে।


Share this article

Leave a Reply

Back To Top