জাকসু নির্বাচন ২০২৫: এক নজরে-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা জাকসু দীর্ঘদিন পর আবারও নির্বাচন আয়োজন করছে। জাকসু নির্বাচন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৩ বছর পর। আজ বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
(ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ছয় বছর পর ভোট গ্রহণে শিক্ষার্থীদের উৎসবমুখর অংশগ্রহণ)
জাকসু কি-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ সংক্ষেপে জাকসু নামে পরিচিত। পূর্বে এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নামে পরিচিত ছিল যেটিকে ২০২৫ সালের পরিমার্জনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নামকরন করা হয়।
জাকসু ফিরে দেখা: ৫৩ বছরে নির্বাচন মাত্র ৯ বার-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। তখনকার দুজন শিক্ষার্থী জানান, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি।
১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সেই নির্বাচনে ঢাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে নেন। ভোটের হার হয়ে যায় ৯০ শতাংশের বেশি।
১৯৭৩ সালে জাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে জিএস প্রার্থী ছিলেন নুরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোজাম্মেলকে গুলি করে হত্যার পর খুনিরা চলে যাওয়ার সময় সর্বহারা পার্টির নামে স্লোগান দিয়েছিল বলে সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন।
১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছিল। তারা জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পেয়েছিল।
জাকসু নির্বাচন ২০২৫ প্রস্তুতি-
জাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন লড়ছেন। এছাড়া হল সংসদের লড়ছেন ৪৪৫ প্রার্থী।
জাকসুতে শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য নেওয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি। নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাস জুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ ফিরবে বলে আশা করছেন শিক্ষার্থীরা।
কেন জাকসু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ?-
জাকসু নির্বাচন ২০২৫ শুধুমাত্র ভোটের প্রক্রিয়া নয়, এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গঠন, অধিকার রক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পুনর্গঠনের একটি সুযোগ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, যারা শিক্ষার্থীদের সমস্যা, অধিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-
শিক্ষার্থীরা আশা করছে—
-
নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
-
প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষা করবে।
-
দুর্নীতি, সেশনজট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যার সমাধানে নির্বাচিত নেতৃত্ব কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জাকসু নির্বাচন ২০২৫ এর সম্ভাব্য প্রভাব-
এই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে না, বরং জাতীয় রাজনীতিতেও একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রশ্নউত্তর-
প্রশ্ন: জাকসু নির্বাচন ২০২৫ কবে অনুষ্ঠিত হবে?
উত্তর: জাকসু নির্বাচন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে।
প্রশ্ন: কতজন ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবে?
উত্তর: প্রায় ১১,৮৯৭ জন শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
প্রশ্ন: জাকসু নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।