জতিসংঘ পার্ক খুলনা – শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক সবুজ বিশ্রামস্থল

জতিসংঘ পার্ক খুলনাজতিসংঘ পার্ক খুলনা পরিচিতি-

খুলনা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন উন্মুক্ত স্থান জতিসংঘ পার্ক খুলনা, যা শহরের ব্যস্ত জীবনের মাঝে এক প্রশান্তির আবাসস্থল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, খোলা মাঠ, ছায়া-ঘেরা পথ ও শিশুদের খেলার সুযোগের জন্য পার্কটি ছোট-বড় সবার কাছেই সমান প্রিয়।

এই পার্কটি একটি পারিবারিক ভ্রমণস্থান, প্রাতঃভ্রমণ, যোগব্যায়াম, শিশুদের খেলা কিংবা শুধুমাত্র প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর আদর্শ স্থান হিসেবে পরিচিত। শহরের বুকে অবস্থিত এই সবুজ এলাকাটি নগরবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তির ঠিকানা।

অবস্থান ও যাতায়াত-

জতিসংঘ পার্ক খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, যা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহজে পৌঁছানো যায়। প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত হওয়ায় এটি সকল বয়সের মানুষের জন্য সহজলভ্য।

কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ স্থান:

  • খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
  • রূপসা সেতু
  • খুলনা রেলস্টেশন (প্রায় ১০–১৫ মিনিট দূরত্বে)

পার্কে পৌঁছাতে রিকশা, অটো বা ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করা যায়। পার্কের প্রধান ফটকের পাশে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।

ইতিহাস ও নামের উৎপত্তি-

জতিসংঘ’ শব্দটির মানে হচ্ছে ‘United Nations’ বা ‘জাতিসংঘ’, যা একতার প্রতীক। এই পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনাবাসীর জন্য একটি পরিচ্ছন্ন, সুস্থ এবং প্রাকৃতিক বিশ্রামস্থল হিসেবে। সময়ের সাথে সাথে এখানে সংযোজিত হয়েছে নানান আধুনিক সুবিধা, যা পার্কটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

পার্কের প্রধান আকর্ষণসমূহ-

জতিসংঘ পার্ক খুলনা দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এখানে রয়েছে—

  • শিশুদের খেলার জায়গা: দোলনা, স্লাইড, সিস-স, ছোট রাইডসহ নানা খেলার সামগ্রী।
  • প্রমোদপথ ও দৌড়ানোর ট্র্যাক: ছায়াযুক্ত গাছের নিচে গোলাকৃতির হাঁটার পথ।
  • খোলা সবুজ মাঠ: বসার, খেলার, কিংবা ছোটখাটো ক্রীড়া আয়োজনের জন্য আদর্শ স্থান।
  • ফুল ও গাছের বাগান: দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও গাছ।
  • বিশ্রামের বেঞ্চ: ছায়ার নিচে বসে থাকার আরামদায়ক ব্যবস্থা।
  • খোলা মঞ্চ: মাঝে মাঝে ছোট অনুষ্ঠান বা স্কুল প্রোগ্রামের আয়োজন হয়।

পরিবেশগত গুরুত্ব-

এই পার্কটি খুলনা শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন—

  • গাছের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাস করা
  • পাখি ও ক্ষুদ্র প্রাণীদের আশ্রয়স্থল
  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
  • নাগরিক জীবনে সবুজ প্রকৃতির উপস্থিতি

পাখি দেখা ও জীববৈচিত্র্য-

ভোরবেলা পার্কে হাঁটার সময় অনেক পাখির দেখা পাওয়া যায়। এখানে সাধারণত দেখা যায়—

  • বুনো কবুতর
  • শালিক
  • দোয়েল
  • চড়ুই
  • মাঝে মাঝে মাছরাঙা

ফুলের গাছগুলোতে প্রজাপতি ও মৌমাছির আনাগোনা নজরে পড়ে, বিশেষ করে বসন্তকালে।

পার্কে যা যা করা যায়-

জতিসংঘ পার্কে আপনি অনেক রকমের কাজ উপভোগ করতে পারবেন:

  • সকালের হাঁটা ও ব্যায়াম
  • ছবি তোলা ও ফটোগ্রাফি
  • পরিবারসহ পিকনিক
  • যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন
  • শিশুদের খেলা

সুবিধা ও পরিষেবা-

পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন সুবিধা—

  • সার্বজনীন টয়লেট
  • নিরাপত্তা কর্মী
  • ময়লা ফেলার বিন
  • পানীয় জলের ব্যবস্থা
  • প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম

পার্কের সময়সূচি ও প্রবেশমূল্য-

  • খোলার সময়:
    • সকাল: ৬:০০ AM – ১২:০০ PM
    • বিকাল: ৩:০০ PM – ৮:০০ PM
  • সাপ্তাহিক ছুটি: শুক্রবার (পরিবর্তনশীল হতে পারে)
  • প্রবেশমূল্য: সাধারণত ১০–২০ টাকা (৫ বছরের নিচে শিশুদের জন্য ফ্রি)

কমিউনিটি প্রোগ্রাম ও উৎসব-

বছরের বিভিন্ন সময়ে এই পার্কে আয়োজিত হয়—

  • স্কুল পিকনিক
  • স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উদযাপন
  • সচেতনতামূলক র‍্যালি
  • শরীরচর্চা প্রশিক্ষণ

জতিসংঘ পার্ক ভ্রমণের সেরা সময়-

অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পার্ক ঘুরে দেখার জন্য সেরা সময়। এই সময়ে আবহাওয়া ঠান্ডা ও মনোরম থাকে, যা হাঁটা, ছবি তোলা, কিংবা পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। গরমকালে দুপুরের সময় পরিহার করাই উত্তম।

উপসংহার-

জতিসংঘ পার্ক খুলনা শুধুমাত্র একটি পার্ক নয়, বরং এটি খুলনাবাসীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শহরের মধ্যে এমন সবুজ ও নিরিবিলি জায়গা আজকাল দুর্লভ। শিশু, তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রবীণ—সব বয়সের মানুষ এখানে একসাথে সময় কাটাতে পারেন।

নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই পার্ককে খুলনার সেরা পার্কগুলোর অন্যতম করে তুলেছে। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে উপযুক্ত স্থান।

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলি-

জতিসংঘ পার্ক খুলনা কোথায় অবস্থিত?
পার্কটি খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, রূপসা সেতুর কাছাকাছি।

পার্কে প্রবেশের সময় কখন?
সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

প্রবেশমূল্য কত?
প্রবেশমূল্য সাধারণত ১০–২০ টাকা। শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারে।

পার্কে খাবার নিয়ে যাওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, পরিবারসহ পিকনিকের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়া যায়, তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

শিশুদের জন্য আলাদা খেলার জায়গা আছে কি?
হ্যাঁ, এখানে শিশুদের জন্য সুন্দর খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।

পার্কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন?
পার্কে নিয়মিত নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করেন, এবং সন্ধ্যার পরে আলোকসজ্জা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top