Flash Story

গাজীপুরের ঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি – ইতিহাস, কিংবদন্তি ও ভ্রমণ গাইড

Dholsomudro Dighi and Purakirti in Gazipur

ঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তিঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি, গাজীপুর: ইতিহাসের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া এক নিদর্শন-

গাজীপুর জেলা শুধুমাত্র আধুনিক শিল্প কারখানার শহর নয়, বরং ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অমূল্য ভাণ্ডার। এই জেলার বুকেই অবস্থিত একটি বিস্মৃত ঐতিহাসিক স্থান — ঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি, গাজীপুর। এটি কেবল একটি দীঘি নয়, বরং বাংলার প্রাচীন সভ্যতার নীরব সাক্ষী।

ঢোলসমুদ্র দীঘির ইতিহাস-

বিশাল আকৃতির এই দীঘিটির উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে নানা মত। ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী, এটি মধ্যযুগীয় বাংলার কোনো রাজা বা জমিদার কর্তৃক খনন করা হয়। চারপাশে পাওয়া গেছে প্রাচীন ইটের কাঠামো, স্তম্ভ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্যের চিহ্ন। এতে বোঝা যায়, এটি এক সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল।

কিংবদন্তি ও লোককথা-

ঢোলসমুদ্র দীঘি নিয়ে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় লোককথা অনুসারে, এক সময় এক রাজা “ঢোল” তার প্রজাদের পানীয় জলের অভাব দূর করতে এক রাতেই এই বিশাল দীঘি খনন করান।
আরও একটি কাহিনীতে বলা হয়, এখানে এক রাজকন্যা স্নান করতেন, যার নাম ছিল সমুদ্র। সে থেকেই দীঘিটির নাম হয় “ঢোলসমুদ্র”।

স্থাপত্য ও পুরাকীর্তির বৈশিষ্ট্য-

ঢোলসমুদ্র দীঘির চারপাশে রয়েছে নানা পুরাকীর্তি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্যের চিহ্ন। যেগুলো হতে পারে:

  • টেরাকোটার দেয়ালচিত্র
  • ইটের ভিত্তি ও বেদি
  • ধর্মীয় স্তম্ভ
  • পোড়ামাটির শিল্পকর্ম

এই পুরাকীর্তিগুলোর মধ্য দিয়ে মধ্যযুগীয় বাংলার নির্মাণশৈলী ও ধর্মীয় জীবনের আভাস পাওয়া যায়।

কেন দেখবেন ঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি?-

  • ইতিহাসের টানে — প্রাচীন বাংলার নিদর্শন ঘুরে দেখার সুযোগ।
  • ফটোগ্রাফির জন্য অনন্য — দীঘি ও স্থাপত্যের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
  • ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য উপযুক্ত স্থান — অজানা ইতিহাসের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।

কীভাবে যাবেন?-

  • অবস্থান: গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায়।
  • যাতায়াতের উপায়:
  • ঢাকা থেকে সরাসরি গাড়িতে – প্রায় ২ ঘণ্টা।
  • বাসে – মহাখালী থেকে কাপাসিয়া, তারপর স্থানীয় যানবাহনে।
  • লোকাল গাইড – স্থানীয় রিকশাচালকরা বেশ ভালোভাবে চিনে।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান-

  • ভাওয়াল রাজবাড়ি
  • কপালেশ্বর মন্দিরঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি, গাজীপুরের ইতিহাস, লোককথা ও দর্শনীয় তথ্য জানুন। বাংলার অতীতের নিদর্শন ঘুরে দেখুন প্রকৃতি ও ইতিহাসের মোহনায়।
  • ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
  • টঙ্গী পুরাতন সেতু ও নদী

সংরক্ষণের অভাব-

বর্তমানে ঢোলসমুদ্র দীঘি ও এর পুরাকীর্তি যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। এর গুরুত্ব বুঝে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে খনন, পুনর্নির্মাণ ও প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

উপসংহার-

ঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি, গাজীপুর কেবলমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়; এটি একটি হারিয়ে যাওয়া সময়কে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ। যারা ইতিহাস ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য।

বাংলার মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা অতীতের এই নিদর্শন যদি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তবে এটি হতে পারে একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রও। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এ ধরনের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করি।

ঢোলসমুদ্র দীঘি ও পুরাকীর্তি নিয়ে প্রশ্নোত্তর-

প্রশ্ন ১: ঢোলসমুদ্র দীঘি কোথায় অবস্থিত?
ঢোলসমুদ্র দীঘি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় অবস্থিত।

প্রশ্ন ২: এই দীঘির পেছনের ইতিহাস কী?
এটি একটি প্রাচীন দীঘি, ধারণা করা হয় রাজা ঢোল কর্তৃক খননকৃত। চারপাশে রয়েছে বহু পুরাকীর্তির চিহ্ন।

প্রশ্ন ৩: কিভাবে যাওয়া যায়?
ঢাকা থেকে বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়।

প্রশ্ন ৪: দীঘির আশেপাশে কী আছে?
ভাওয়াল রাজবাড়ি, কপালেশ্বর মন্দির সহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে আশেপাশে।

প্রশ্ন ৫: কখন গেলে সবচেয়ে ভালো?
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শীতকালে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top