সুদানে ড্রোন হামলা-
সুদানের দারফুর অঞ্চলের রাজধানী এল ফাশের শহরে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সুদানে মসজিদে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে অন্তত ৭৮ জন মুসল্লি প্রাণ হারিয়েছেন। এ হামলায় অনেকেই আহত হয়েছেন, মসজিদটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ঘটনা গভীর উদ্বেগ ও নিন্দার জন্ম দিয়েছে। মোটামুটিভাবে, সুদান গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অভ্যুত্থানে নিমজ্জিত, এবং এই ধরনের ঘটনা দেখাচ্ছে ন্যূনতম রক্ষাবেষ্টন দেখা যাচ্ছে না।
এই ব্লগে আমরা বিশ্লেষণ করব — ঘটনার পটভূমি, দায়ী পক্ষ, মানবিক প্রভাব, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া।
সুদানে ড্রোন হামলা ঘটনার প্রেক্ষাপট-
কবে ও কোথায়?: এই হামলা হয়েছে ২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, এল ফাশের শহরে, দারফুর অঞ্চলে। হামলাটি হয়েছিল শুক্রবার সকালে ফজর নামাজের সময়, যখন বহু মুসল্লি মসজিদে প্রার্থনা করছিল। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক অধিবাসী জানিয়েছেন যে ফজর নামাজের সময় মসজিদে ড্রোন হামলা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বহু মানুষ মারা যায়।
দায়ী কে: এ ঘটনায় হামলাটি দায়ী হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছে সুদানের দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস Paramilitary Rapid Support Forces (RSF) দায়ী করা হলেও তারা এর দায় নেয়নি।
ক্ষতি ও নিহতদের সংখ্যা: মেডিকেল সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রতিবেদন লেখার সময় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও অনেকের মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছিল।
মসজিদের অবস্থা: মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, মৃতদের উদ্ধার চলছে। প্রার্থনালয়ের দেয়াল ধ্বংস, ছাদ ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসাবশেষে মানুষ চাপা পড়েছে।
সামরিক প্রেক্ষাপট:
গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে সুদানে সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দারফুরে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এল ফাশের শহর পুরোপরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে আরএসএফ। এল ফাশের শহরের দখলে নিতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে আরএসএফ। এটি দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি। সেখানকার তিন লাখের বেশি বেসামরিক নাগরিক এই লড়াইয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছে।
সুদানের বিশ্লেষক ও অধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, সাধারণ নাগরিকরা আরএসএফের রোষের শিকার হতে পারেন। কারণ তাদের অধিকাংশই আধাসামরিক বাহিনীটির দৃষ্টিতে শত্রু জনগোষ্ঠীর অংশ।
এদিকে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, এটি ক্রমেই জাতিগত সংঘাতে রূপ নিচ্ছে এবং প্রতিপক্ষকে সহযোগিতার অভিযোগে দুপক্ষই সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার নথিতে দেখা গেছে, দখল করা এলাকায় অ-আরব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূলনীতি চালাচ্ছে আরএসএফ। সম্প্রতি ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, এল ফাশেরকে অ-আরব জনগোষ্ঠীমুক্ত করার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছে গোষ্ঠীটি। অবশ্য এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে আরএসএফ। তাদের দাবি, কোনো জাতিগত সংঘাতে তারা জড়িত নয়।
সুদানে ড্রোন হামলা তে মানবিক ও সামাজিক প্রভাব-
প্রার্থনায় বসা অনেকে ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। এই মৃত্যু শুধু সংখ্যাগত নয়, পরিবার-সমাজে বড় ক্ষতি ও মানসিক শোক তৈরি করছে। মসজিদ, যা প্রার্থনার স্থান — এমন স্থানে হামলা ধর্মীয় অনুভূতির গভীর অবনতি ঘটায়। মানুষ ধর্মীয় জায়গা নিরাপদ মনে করে; এমন হামলা সেই বিশ্বাস ভেঙে দেয়। যারা ইতিমধ্যে সংগ্রামে ও উদ্বাস্তুতে রয়েছেন, তাদের জন্য এই ধরনের হামলা আরও বিপদজনক। আশ্রয়ের অভাব, চিকিৎসার অভাব, দাফনকাজ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কঠিন হয়ে পড়ে। দাফন ব্যবস্থা ও পরবর্তী সাহায্য কার্যক্রমে বাধা তৈরি হয়। এইভাবে দাঙ্গা, হামলা, ফ্যাসাদ শুধু পরিবার নয় বরং গোটা সমাজ ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে চলছে যা মানবীয় দৃষ্টিতে ধিক্কারজনক।
উপসংহার-
“সুদানে মসজিদে ড্রোন হামলা” শুধু একটি ট্র্যাজেডি নয়, একটি গুরুতর সতর্কবার্তা — গৃহযুদ্ধে ধর্মীয় ও মানবিক স্থানেও নিরাপত্তার অভাব কতখানি ভয়াবহ হতে পারে। নিহতের সংখ্যা যতই নির্ধারিত হোক, মানবিক, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাব অপরিমেয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা, রাজনীতি ও সুদানের অভ্যন্তরীণ পক্ষগুলোকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে, ত্রাণ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধের জন্য নীতি ও বাস্তব পদক্ষেপ গঠন করতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-
প্রশ্ন : এই হামলায় মোট কতজন নিহত হয়েছেন?
উত্তর: হামলার পরে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা “৭০ জনেরও বেশি”, “৭৫ জন”, “৭৮ জন” হয়ে থাকতে পারে। কিছু মেডিকেল ও স্থানীয় উদ্ধারকারীরা বলছেন “৭৮ জন” নিহত হয়েছে। এখনও ধ্বংসাবশেষ থেকে দেহ উদ্ধার কাজ চলছে, তাই চূড়ান্ত সংখ্যা বাড়তে পারে।
প্রশ্ন : হামলা কখন হয়েছে এবং কে দায়ী?
উত্তর: হামলাটি হয়েছে ২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, দারফুর অঞ্চলের এল ফাশের শহরের এক মসজিদে — ফজর নামাজের সময়। দায়ী করা হচ্ছে সুদের Rapid Support Forces (RSF) নামক প্যারামিলিটারিগোষ্ঠীকে।
প্রশ্ন : এই ঘটনা কি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন?
উত্তর: হ্যাঁ — ধর্মীয় স্থানে হামলা, যেখানে অনেকেই প্রার্থনা করছিলেন, এটা মানবিক আইন ও যুদ্ধবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে “যুদ্ধ অপরাধ” বা “আধট্র যুদ্ধ আইন লঙ্ঘন” হিসেবে দেখছে।
প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কীভাবে?
উত্তর: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা নিন্দা জানাচ্ছে। জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা হামলার তদন্ত ও দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম নিশ্চিত করার আহ্বান করছে। কিছু দেশ গোষ্ঠী ও সরকার ক্ষতিপূরণের কথা বলছে। তবে, এখনও শান্তি ও স্থায়ী নিরাপত্তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।