মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ–
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে -মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৫ টি ইউনিট।
প্রথম দফায় পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভাতে যায়। পরে আরও একটি তাতে যুক্ত হয় বলে জানান তালহা বিন জসিম। তবে প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। মিরপুর রূপনগর শিয়ালবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের নিহতের তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
তিনি বলেন, সব লাশ ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের পোশাক কারখানাকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বেলা পৌনে একটার দিকে বলেন, মিরপুরের শিয়ালবাড়ির দুটো প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে। এর মধ্যে একটি তৈরি পোশাক কারখানা অন্যটি একটি রাসায়নিকের গুদাম। পোশাক কারখানাটি সাত তলা। এর চার তলায় আগুন লেগেছে। আমরা পোশাক কারখানার এই আগুনটি মোটামুটি নিভিয়ে ফেলেছি। তবে রাসায়নিকের গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে।
ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে আগুন নেভানোর পর ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া যায় ১৬ জনের মরদেহ। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী শ্রমিক বলে জানা গেছে।
শ্রমিকদের বেঁচে ফেরা কাহিনি–
ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা এক শ্রমিক বলেন,“ আমরা হঠাৎ দেখি ধোঁয়া উঠেছে, তখনই সবাই দৌড়াতে শুরু করি। কিন্তু সিঁড়ির পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিছু সহকর্মী জানালা দিয়ে লাফ দেয়, আবার কেউ কেউ উপরে উঠে আশ্রয় নেয়।”
আরেক শ্রমিক জানান, ভবনের জরুরি বহির্গমন দরজা বন্ধ ছিল, যার কারণে অনেকে বের হতে পারেননি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালার গ্রিল কেটে ও মই ব্যবহার করে অনেক শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান–
মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি, তবে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, এই আগুন পাশের একটি অবৈধ রাসায়নিক গুদাম থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস টিম, প্রশাসন, সাধারণ জনগণ ও সংবাদমাধ্যমের ধারণা- এই অবৈধ রাসায়নিক গুদামকেই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড ঘটার ৪ দিন পরেও বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস-
আগুন লাগার ৪ দিন পরও রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে শিয়ালবাড়ি এলাকায় রাসায়নিক গুদাম ও তৈরি পোশাক কারখানা থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়ার মতো এক ধরনের গ্যাস। যাকে হাউড্রোজেন সালফাইড বলছে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সংস্থাগুলো।ফয়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করছে ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি ও মান নির্ণয়ে গ্যাস ডিটেক্টর যন্ত্র ব্যবহার করে সংস্থা দুটি। এতে ধরা পড়ে উচ্চ মাত্রার হাউড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের উপস্থিতি। জায়গা ভেদে ৬০ থেকে ১৫০ পিপিএম পর্যন্ত হাইড্রোজেন সালফার পেয়েছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের গ্যাস ডিটেক্টর।
ঢাকা বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহমুদ উজ জামান বলেন, ‘গোডাউনের ভেতরে ও বাইরে উচ্চ মাত্রার হাউড্রোজেন সালফাইডের পাশাপাশি পাওয়া গেছে ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইডও। এ বিষাক্ত গ্যাস মানুষের স্বাস্থ্য তথা জীবনের জন্য হুমকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা সাধারণ কোনও আগুন নয়, কেমিক্যালের আগুন। আশপাশে অনেক বিষাক্ত উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে আছে। অন্তত ১৫০ থেকে ৩০০ মিটার এলাকার মানুষকে সরিয়ে নেয়া উচিত। আর বাতাসের দিক যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা খালি রাখা ভালো।’
সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো। এরপরও টনক নড়েনি বাসিন্দাদের। দু-একজন মাস্ক ব্যবহার করলেও বেশিরভাগই মাস্কবিহীন চলাফেরা করছেন।
এদিকে গুদামের ভেতরের পরিবেশ খুবই বিষাক্ত হওয়ায় সেখান থেকে রাসায়নিক দ্রব্য সরিয়ে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস পয়োনিষ্কাশনের লাইন ব্যবহারসহ রাসায়নিক অপসারণের বিকল্প কৌশল নিয়ে ভাবছে।
উপসংহার-
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল যে নিরাপত্তায় অবহেলা মানে মানবিক বিপর্যয়। কেমিকেল গোডাউন ও পোশাক কারখানাগুলোর জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিদর্শন ও প্রশিক্ষণ এখন সময়ের দাবি।
প্রশ্নোত্তর-
১. মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে কোথায় আগুন লাগে?
মিরপুর-১০ এলাকায় একটি কেমিকেল গোডাউন ও পোশাক কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে।
২. আগুনের কারণ কী ছিল?
সম্ভবত বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিট থেকে শুরু হয়ে কেমিকেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
৩. বাতাসে কেন বিষাক্ত গ্যাস ছড়াচ্ছে?
গোডাউনে সংরক্ষিত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ পুড়ে গিয়ে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়েছে।
৪. বাসিন্দাদের কী পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?
বাসিন্দাদের মাস্ক পরা, ঘরে অবস্থান ও শিশু-বৃদ্ধদের বাইরে না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।