Flash Story
Gen-Z এর ইসলামপ্রীতি
Gen-Z এর ইসলামপ্রীতি: নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুসলিম হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি ও ধর্মীয় চেতনায় নতুন জাগরণ।
সুদানে ড্রোন হামলা
সুদানে ড্রোন হামলা: মসজিদে ড্রোন হামলায় নিহত অন্তত ৭৮ বিশ্বাসীদের রক্তাক্ত প্রার্থনা
আরব ন্যাটো
আরব ন্যাটো- আরব দেশগুলোর সামরিক জোটের উদ্যোগ কতটা আলোর মুখ দেখবে?
মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্য- আরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান
কাতারে ইসরায়েলের হামলা: নামাজে যাওয়ার কারণেই কি হামাস নেতারা বেঁচে গেছেন?
গাজায় বোমা হামলা – অমানবীয় গণনির্যাতনের শেষ কোথায়?? গাজার মানবাধিকার সংকট।
nepal
নেপালের অন্তবর্তীকালীন সরকার- কে হলেন নেপালের অন্তবর্তীকালীন সরকার?
নেপাল সরকারের পতন: নেপাল কী শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পথেই হেঁটেছে??
ছাত্রশিবিরের ডাকসু: কেন আলোচনায় ও জনপ্রিয়তায় এল? এর জনপ্রিয়তার পেছনের ইতিহাস ও প্রভাব
আরব ন্যাটো
Share this article

আরব ন্যাটো – আরব দেশগুলোর সামরিক জোটের উদ্যোগ-

মধ্যপ্রাচ্য এমন এক ভূখণ্ড, যেখানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সামরিক সংঘর্ষ এবং ধর্মীয় বিভাজন দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। এই অঞ্চল শুধু প্রাকৃতিক সম্পদের জন্যই নয়, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বরাবরই বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে এক নতুন ধারণা বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে – সেটি হলো “আরব ন্যাটো” বা আরব দেশগুলোর সামরিক জোটের উদ্যোগ।

হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে কাতারের রাজধানী দোহায় গত মঙ্গলবার হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলাই যেন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের এক শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে। সেটি হলো- আরব সামরিক জোটের জন্ম।

ইসরায়েলের হামলার চারদিন পর গত রোববার দোহায় শুরু হয় আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি সম্মেলন। সোমবার সেখানে ইউরোপের ন্যাটোর আদলে একটি সামরিক জোট গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

 সেটি হলো “আরব ন্যাটো” বা আরব । কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই জোট আদৌ কি কার্যকর হবে? নাকি অন্যান্য বহু উদ্যোগের মতো ইতিহাসের গহীনে হারিয়ে যাবে?, নতুন উদ্যোগ কতটা আলোর মুখ দেখবে?, এখন কেন এই সামরিক জোট গঠনের প্রয়োজন হলো এবং যে পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ দরকার সেটি আসবে কোথা থেকে?, দোহায় হামলার পর এখন তাদের ভূমিকা কেমন হবে?। (মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্য- আরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান)

ন্যাটো কী-

ন্যাটো (NATO) এর পূর্ণরূপ হলো North Atlantic Treaty Organization
এটি ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সামরিক জোট।উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) হলো ৩২ সদস্যের একটি সামরিক জোট। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই জোটের সদস্য রাষ্ট্রের বেশিরভাগই ইউরোপ মহাদেশের। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রের মধ্যে কেবল তুরস্ক ও আলবেনিয়া ন্যাটোর সদস্য।বলা হয়ে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকি মোকাবিলায় ১৯৪৯ সালে ন্যাটো গঠন করা হয়। জোটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এ কথা আংশিক সত্য। বাস্তবে এই জোট গঠনের উদ্দেশ্য আরও বিস্তৃত। এটি সোভিয়েতের সম্প্রসারণবাদ রোধের পাশাপাশি ইউরোপীয় রাজনৈতিক সংহতি উৎসাহিত করতে চেয়েছে।

 এর মূল লক্ষ্য হলো –

  • সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

  • কোনো সদস্য দেশ আক্রমণের শিকার হলে বাকিরা একসাথে প্রতিরক্ষা করবে

  • রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখা

বর্তমানে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৩২টি দেশ এই জোটের সদস্য

আরব ন্যাটোর মূল ধারণা-

“আরব ন্যাটো” বলতে বোঝানো হচ্ছে ন্যাটোর মতো একটি যৌথ সামরিক জোট, যেখানে আরব লিগভুক্ত দেশগুলো একসাথে কাজ করবে। এর মূল লক্ষ্য হবে –

  • আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

  • সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা

  • ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিহত করা

  • বহিঃশক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো

এই জোট বাস্তবায়িত হলে এটি হবে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সংগঠন, যা শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিক কূটনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আরব ন্যাটোর প্রেক্ষাপট-

আরব দেশগুলো কেন একটি যৌথ সামরিক জোট গঠনের কথা ভাবছে তার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে:

 ইরানের প্রভাব মোকাবেলা

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি-শিয়া রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক – প্রায় সর্বত্র ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর উত্থান ঘটেছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো মনে করে, ইরান আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন

আইএস, আল-কায়েদা এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল ক্ষতি করেছে। এসব সংগঠনকে দমন করতে যৌথ উদ্যোগ ছাড়া কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। তাই একটি আরব সামরিক জোট অনেকটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে উপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াশিংটন তাদের সরাসরি সামরিক ভূমিকা কমিয়ে আনছে। এ অবস্থায় মার্কিন মিত্র আরব দেশগুলো নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে চায়।

 অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েন

আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সিরিয়া ও ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ, কাতার সংকট, লিবিয়ার রাজনৈতিক ভাঙন – এসব প্রেক্ষাপটে যৌথ নিরাপত্তা উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে।

আরব ন্যাটো গঠনের পূর্বপরিকল্পনা যেমন হতে যাচ্ছে-

সম্মেলনে মিশরের পক্ষ থেকেই আরব ন্যাটো গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আরব বিশ্বের মধ্যে এই দেশটির সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড়।ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম মাআন এর বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, আরব ন্যাটোতে প্রায় ২০ হাজার সৈন্য দিয়ে অবদান রাখতে চায় মিশর। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মিশরের সেনাবাহিনীর একজন চার তারকা মর্যাদার কর্মকর্তাকে কমান্ডে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এই ন্যাটোতে সৌদি আরবকে মূল সহযোগী হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ নিয়ে আলোচনা চলমান।সংযুক্ত আরব আমিরাতের গণমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল বলছে, একটি সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে মোট কমান্ডারের পাশাপাশি, অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর একজনকে চিফ অব স্টাফ হিসেবে নির্বাচন করা হবে। এছাড়াও একটি পরিকল্পনা কাউন্সিল থাকবে। যেটি প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহে সমন্বয়ের বিষয়টি দেখভাল করবে।

বাহিনীতে প্রতিটি দেশের অবদান তাদের সামরিক ক্ষমতা এবং সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হবে। যুদ্ধ বা শান্তি রক্ষার মিশনে বাহিনী ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে হবে। এরপর অংশগ্রহণকারী দেশের সঙ্গে পরামর্শের পর কমান্ডার ও চিফ অব স্টাফ অনুমোদন দেবেন।

সম্মেলনের একটি সূত্র আরও জানিয়েছে, এই বাহিনী নিরাপত্তা হুমকি ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম মোকাবিলা করবে। যে কেউ আরব বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আরব ন্যাটোর সম্ভাব্য রুপরেখা

অস্থ সরবরাহ

আরব ন্যাটোর সম্ভাব্য রূপরেখার মধ্যে একটি হলো অস্ত্র সরবরাহ সমন্বয়। যদিও আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, তবে এ ধরনের জোট গঠন হলে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পশ্চিমা সরবরাহকারীদের থেকে সরিয়ে আনতে পারে। সুযোগ তৈরি হতে পারে চীনের। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই চীনের অস্ত্র প্রস্তুতকারকরা আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিক্রি করছে।

অর্থায়ন .সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা বাজেট।

২.সৌদি আরব ও ইউএই’র নেতৃত্বে মূল অর্থায়ন হওয়ার  সম্ভাবনা বেশি।

সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট: ডিজিটাল আক্রমণ প্রতিরোধে।

যৌথ বিমান নৌবাহিনী ইউনিট: উপসাগরীয় ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে টহল।

উপসংহার-

আরব ন্যাটো – আরব দেশগুলোর সামরিক জোটের উদ্যোগ এখনো বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি তাত্ত্বিক ধারণা। এটি সফল হলে আরব দেশগুলো নিজেদের নিরাপত্তা আরও দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ – বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং বহিরাগত শক্তির প্রভাব – এই উদ্যোগকে আলোর মুখ দেখতে বাঁধাগ্রস্ত করছে।
তবুও ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে যদি রাজনৈতিক সমঝোতা বাড়ে, তবে একটি কার্যকর “আরব ন্যাটো” হয়তো একদিন বাস্তবেই আলোর মুখ দেখবে।

আরব ন্যাটো সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন-

প্রশ্ন ১: আরব ন্যাটো কী?

উত্তর: আরব ন্যাটো হলো একটি সম্ভাব্য যৌথ সামরিক জোট, যেখানে আরব দেশগুলো ন্যাটোর মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা করবে।

প্রশ্ন ২: আরব ন্যাটোর মূল উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: সন্ত্রাসবাদ দমন, ইরানের প্রভাব মোকাবিলা, সীমান্ত সুরক্ষা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

প্রশ্ন ৩: আরব ন্যাটো গঠন হলে কোন দেশগুলো নেতৃত্ব দিতে পারে?

উত্তর: সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জর্ডানকে সম্ভাব্য নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

প্রশ্ন ৪: আরব ন্যাটো গঠনে প্রধান বাধা কী?

উত্তর: অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং বহিরাগত শক্তির প্রভাব।


Share this article

Leave a Reply

Back To Top